ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনবাহী জাহাজ এলসিটি কাজল, কুতুবদিয়া ও বে-ক্রুজচলাচল করছে

TEKNAF-PICসাইফুদ্দীন মোহাম্মদ মামুন, টেকনাফ ::

টেকনাফ-সেন্টমাটিন নৌরুটে এলসিটি কাজল,কুতুবদিয়া ও বে-ক্রুজ নামের জাহাজগুলি ধারণ ক্ষমতার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি যাত্রী বহন করে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে জাহাজ ডুবে বহু লোকের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ জাহাজগুলির ধারণ ক্ষমতা কত কোস্টগার্ড ষ্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানাতে না পারলেও জাহাজ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কথা স্বীকার করছেন।

 ১৭ ফেব্রুয়ারী বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে টেকনাফে দমদমিয়া জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, এলসিটি কাজল জাহাজে ধারণক্ষমতা ৫০০জনের স্থলে দুই হাজার পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্য রওনা দেন। প্রায় ঘন্টা খানেক পর এলসিটি কাজল নাফনদীর মাঝ পথে পৌছলে জাহাজটি ঢোলতে থাকে। এতে পর্যটকরা কান্নাকাটি করলে জাহাজটি ঘাটে ফিরে এসে কিছু পযর্টক নামিয়ে দিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করেন। এরপর টাকা ফেরতের দাবীতে পযর্টকের মধ্য উত্তেজনা বিরাজ করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় যশোর থেকে ভ্রমণে আসা সাজেদ হাসান বলেন, সকালে টেকনাফে পৌছানোর পর পরিবারের ১২জন সদস্যের জন্য (এলসিটি কাজলে) ছয় হাজার ৬০০টাকা দিয়ে সেন্টমার্টিন আসা-যাওয়ার টিকেট নিয়ে জাহাজে উঠি। কিন্তু জাহাজে উঠে চেয়ারে বসা তো দূরের কথা, ঠাসাঠাসি করে দাঁড়ানোরও জায়গা না পেয়ে অবাক হন তারা। তাদের ভাস্যমতে,তখন জাহাজটিতে প্রায় দুই হাজারের মতো পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনে উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। জাহাজটি ঘাট থেকে ছেড়ে প্রায় চার কিলোমিটার পথপাড়ি দেওয়ার পর নাফনদীর নাইট্যংপাড়া পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে অতিরিক্ত যাত্রী হওয়াই জাহাজটি হেলে-দোলে থাকে। এ সময় জাহাজের থাকা শিশু-নারীরা কান্নাকাটি করতে থাকে। পরে পযর্টকদের বাধার মুখে জাহাজটি ঘাটে ফেরত এসে পাঁচ শতাধিক যাত্রী নামিয়ে দিলেও তাদের টিকেটের কোন টাকা ফেরত দেয়নি। এছাড়া এলসিটি কাজলের মত কুতুবদিয়া জাহাজ ও বে-ক্রুজে প্রতিদিন ধারণক্ষমতা চেয়ে দেড়-দুই হাজার বেশি পর্যটক বহন করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এ নৌপথে চলাচলকারী জাহাজগুলোর মধ্যে এলসিটি কুতুবদিয়া, কাজল ও বে ক্রুজ ধারণক্ষমতার বেশি পযর্টক বহন করায় দায়ে গত ৯ জানুয়ারী এলসিটি কাজলকে ১৫হাজার টাকা ও বে ক্রুজকে ৫ হাজার টাকা। এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর এলসিটি কাজলকে ৬০ হাজার ও বে ক্রুজকে ১০হাজারসহ জাহাজের মালিককে ৭০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত পযর্টক পরিবহনের খবর পেয়ে জাহাজের কর্তৃপক্ষকে ছেড়ে না যাওযার নির্দেশ দেওয়ার পর পরে কিছু যাত্রী নামিয়ে দিয়ে কাজল জাহাজটি পুনরায় সেন্টমার্টিন গেছে। ওই দুটি জাহাজের ধারণ ক্ষমতা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ শতাধিকের মতো। অভিযুক্ত জাহাজ কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি ক্ষোভের সাথে জানান। এলসিটি কাজল জাহাজের ব্যবস্থাপক মো. তাহের অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের অভিযোগ অস¡ীকার করে বলেন, তাঁরা প্রায় দেড় হাজারের মতো পযর্টক নিয়ে সেন্টমার্টিন গেছেন। ওই জাহাজের ধারণ ক্ষমতা কত জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের উত্তর দিতে পারেনি। নামিয়ে দেওয়া পযর্টকদের টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে টেকনাফে আসলে প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করে চা পান করার প্রস্তাব দেন। এলসিটি কুতুবদিয়ার ব্যবস্থাপক আজিজ কুতুর বলেন, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তজাতিক মার্তৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে তিনদিনের সরকারী ছুটি থাকায় পযর্টকের চাপ বেশি হওয়ায় (আজ) গতকাল অতিরিক্ত কিছু পযর্টক পরিবহন করা হয়েছে। এমনকি ব্যবস্থাপকগুলি হেসে হেসে বলেন,আমাদের বিরুদ্ধে যত ইচ্ছে লিখেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোস্টগার্ড টেকনাফ ষ্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ধারণ ক্ষমতার বেশি পযর্টক পরিবহন করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের সুনির্দিস্ট ধারণ ক্ষমতা কত সেটা এখনও নাকি তাদের জানা নেই। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ জানান, দমদমিয়া জাহাজঘাটে নামিয়ে দেওয়া যাত্রীদের টাকা ফেরত না দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিলে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিন্তু জাহাজ কর্তৃপক্ষ পযর্টকদের কোন টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের সাথে চরম অন্যায় করেছে।

পাঠকের মতামত: